ঢাকা, ৭ এপ্রিল, ২০১৪ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সচিবদের সঙ্গে এক বৈঠকে তাঁর দলের ভিশন, দর্শন ও নির্বাচনী ইশতেহারের ওপর ভিত্তি করে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং দেশকে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় উন্নয়নে তাঁর দলের নির্বাচনী ইশতেহার এবং সরকারের দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কর্মসূচি সর্তকতার সঙ্গে বাস্তবায়নে সচিবগণ সহযোগিতা করে চলেছেন বলে তাদের জন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ ৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে চলা সচিবদের এ বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় তথ্য সচিব মুর্তজা আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সরকারের ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা নির্বাচনী ইশতেহারেই রয়েছে। এ ইশতেহার থেকে সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা সুচারুভাবে উপলদ্ধি করে সচিবদেরই নানা প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে বলে প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, সঠিক প্রকল্প বাছাই করা, যে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে তা আদৌ দরকার আছে কিনা দেখা এবং গৃহীত প্রকল্প থেকে উপকারভোগীরা যেনো বাদ না যায়, তা সচিবদেরই দেখার কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। এ জন্য প্রয়োজনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে প্রকল্প তৈরি করার প্রতিও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য আসেন, আর জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদ স্থায়ী। তাই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সচিবদেরই বেশি উদ্যোগী হতে হবে বলেও প্রধানমন্ত্রী তাগিদ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দিন দিন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে, তা জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের আয়ত্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণের ওপরও জোর দিয়েছেন তিনি।
দেশের ক্রান্তিকালে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাগণ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় প্রধানমন্ত্রী তাদের ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, একটি গোষ্ঠী নির্বাচন-পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ওই কূটকৌশল ভেস্তে যায়। প্রধানমন্ত্রী এ জন্য সন্তোষ প্রকাশ এবং আগামীতেও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা এভাবে কাজ করবেন বলেও তিনি আশা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বিগত ৫ বছরে সরকারের সাফল্য ও অর্জন বাস্তবায়নে সচিবদের সহযোগিতার প্রশংসা করে আরো বলেন, সরকারের রূপকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তা অধঃস্তন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বও সচিবদের।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবদের সঙ্গে এ আলোচনায় সর্বোপরি দেশের সুশাসন, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন বাস্তবায়ন সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণশুনানিকে আরো কার্যকর ও সম্প্রসারণ করার তাগিদ দিয়েছেন। জেলা পর্যায়ে প্রতি বুধবার গণশুনানি চালু থাকলেও মাঠ ও জাতীয় পর্যায়ে এই গণশুনানিকে সম্প্রসারণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি সিস্টেম তৈরি করার কথা উল্লেখ করে বলেন, যেনো মানুষের অভিযোগ শুনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খাদ্যে ভেজাল নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ নিবিড় পর্যবেক্ষণ বাড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে যুক্ত করার প্রতি জোর দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বৃতি দিয়ে মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ৫ বছর আগেও আমাদের এডিপি ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা। তা বর্তমানে দ্বিগুণের বেশি হয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছলেও আমরা ৯০% থেকে ৯৫%-এর বেশি কাজে লাগাতে পারছি না। আমাদের এ ধারা ধরে রাখতে এবং আরো বেশি কাজে লাগাতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলারও আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। সচিবদের তিনি বলেন, ১৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এ জন্য চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ২০টি মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কাজ করে থাকলেও তাদের আরো গুরুত্ব দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির এ কাজটি করতে হবে।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। তবে অর্থ সহায়তা বৃদ্ধি করে নয়, স্থানীয় সম্পদ তৈরিতে তাদের কাজের ক্ষেত্র তৈরির মাধ্যমে। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন।
লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা গানটি পরিবেশনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনার উন্মেষ ঘটেছে, তা ধরে রেখে এবং এ চেতনাকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মকে দেশের উন্নয়নে ব্যবহার করার কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট প্রণয়নের কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোশাররাফ হোসেন বলেন, আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রী কিছু অনুশাসন দিয়েছেন, সেগুলো পরিপালন করে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, বকেয়া বিদ্যুৎ বিল ও ভূমি উন্নয়ন ট্যাক্স দ্রুত আদায়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিও প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য নেয়ার নিদের্শ দেন।
সচিব সভার এ বৈঠকে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ ৬১ জন সচিব উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন ২২ জন সচিব।