বিশ্বায়নে একুশে ফেব্রুয়ারী অর্থাৎ বিশ্বের মতামত, ধারণা ও সাংস্কৃতিক বলয়, পণ্য, ও অন্যান্য আলোচিত দিকের বিনিময় থেকে উদ্ভূত আন্তর্জাতিক ইন্টিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সংগে যুক্ত হয়েছে নতুন একটি দিন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বা 'মহান একুশে ফেব্রুয়ারী. আর এ দিবসের মাধ্যমে বিশ্বের বহুবিচিত্র সংস্কৃতিতে বাংলাদেশ তার সম্মান প্রাপ্তির স্থানটুকু দখল করে নিয়েছে।
সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং দেশাচারের রীতিগুলোর হিস্যা বন্টনের উল্লেখযোগ্য সুযোগ সৃষ্টির একটি দিন- একুশে ফেব্রুয়ারী।
যদিও বিশ্বায়নের প্রধান বিষয়গুলো মনে করা হয় পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নতি, ইন্টারনেট, টেলিগ্রাফ ও এগুলোর বৃদ্ধি সহ, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম এবং পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি। আধুনিক সময়ের পণ্ডিতদের মধ্যে বিশ্বায়নের উৎস স্থাপন নিয়ে নানামত রয়েছে। ১৯ ও ২০ শতাব্দীর প্রথম দিকে, বিশ্বের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির সংযোগ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়.
১৯৮০ সাল থেকে শব্দ বিশ্বায়নের ক্রমবর্ধমান ও বিশেষ করে ১৯৯০ সালের মাঝামাঝি থেকে এর বিপুল ব্যবহার শুরু হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিশ্বায়নের চারটি মৌলিক দিক চিহ্নিত করেছে যেমন. বাণিজ্য ও লেনদেন, রাজধানী ও বিনিয়োগ আন্দোলন, মাইগ্রেশন ও মানুষের মধ্যে জ্ঞান প্রচার. এছাড়াও যেমন, জলবায়ু পরিবর্তন, সীমানায় জল ও বায়ু দূষণ, এবং অতিরিক্ত মাছ ধরায় সমুদ্রে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ বিশ্বায়নের ধারনা দ্বারা প্রভাবিত. বিশ্বায়নের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ব্যবসা, কাজ, প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সম্পদ, এবং প্রাকৃতিক পরিবেশকে.
কানাডার, এডমোনটনে গত কয়বছরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশান অব এডমোনটন, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, বাংলাদেশ ষ্টুডেন্টস এসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে আসছে। মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে একটি অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আলবার্টা প্রাদেশিক পরিষদের এমএলএ জনাব নরেশ বার্দাজ। বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশানের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ আমি সহ মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক হুসাইন, মুক্তিযোদ্ধা মুকবুল হোসেন,মুক্তিযোদ্ধা ঈমানুল খন্দকার ও মুক্তিযোদ্ধা তোফায়েল আহমেদকে সন্মাননা প্রদান করা হয়। জনাব নরেশ বার্দাজ এমএলএ বাংলাদেশ কমিউনিটির ভূয়সী প্রশংসা করে বহুভাষার উন্নয়নে ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ভাষা রক্ষায় সরকারী সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
২১শে ফেব্রোয়ারী (২০১৪) তে কানাডার সন্মানিত প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হারপার, পিসি, এমপি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা’র কাছে প্রেরিত এক বার্তায় আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। এ দিবসটি উদযাপনে সোসাইটি’র ভুমিকায় ব্যক্তিগতভাবে তিনি উষ্ণ আনন্দ প্রকাশ করেন। তিনি তার বার্তায় বলেন ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষনা করে, যা একটা বহুভাষাবাদ এবং বহুসংস্কৃতি প্রচারের উপলক্ষ। আমাদের অসাধারণ ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারনে এ দিবসটি উদযাপন কানাডার জন্য বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। এছাড়াও আমাদের (কানাডার) দুটি দাপ্তরিক ভাষা এবং প্রথম জাতিসমূহ ও লাখ লাখ কানাডীয়ান গর্বিতভাবে দেশীয় ভাষা তাদের বাড়ী ও কমিউনিটিতে সংরক্ষণ করে। আমি কানাডায় বাংলাদেশ কমিউনিটির ২১শে ফেব্রুয়ারী ছাড়াও ৪৩ তম স্বাধীনতা বার্ষিকী পালন উপলক্ষ্যে আপনাদের সাথে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস এবং কানাডায় বহুজাতিক সমাজে আপনাদের অনবদ্য অবদানের জন্য কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
এছাড়াও বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা’র সভাপতি বরাবর গত বছর আলবার্টা প্রদেশের প্রিমিয়ার এলিসন রেডফোর্ড কিউসি, স্পীকার জেনে জুঝডেস্কী, কালচারাল মিনিষ্টার হেদার ক্লিমচুক, সহযোগী মন্ত্রী নরেশ বারদওয়াজ, সোহেল কাদরী এম, এল, এ এবং ইউনিভার্সিটি অব ম্যাকুইনের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ডব্লিউ এটকিনশন দিবসটির উপর গুরুত্বারূপ করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যাকুইনে বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড ইথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা'র পক্ষ থেকে একুশে হেরিটেজ পদক দেয়া হয়। পদকপ্রাপ্তরা ছিলেন: রাজশাহীর অন্যতম ভাষা সৈনিক মোঃ সিদ্দিক হুসাইনÂ প্রফেসর ডঃ নূরুল ইসলাম (শিক্ষা), ডঃ হাফিজুর রহমান (কমিউনিটি সার্ভিস), সহিদ হাসান (কমিউনিটি সার্ভিস ও সাংগঠনিক), তাজুল আলী (কমিউনিটি সার্ভিস), স্বেচ্ছাসবী মুহাম্মদ ইসমাইল (কমিউনিটি সার্ভিস)।
এডমোনটনে ইউনিভার্সিটি অব ম্যাকুইনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে দিবসের কর্মসূচী শুরু হবে এবার একুশেতে। বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা (বিপিসিএ) একুশে উদযাপন উপলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসুচী হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা শিশুদের জন্য চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশান অব এডমোনটন রক্তদান, ও বাংলাদেশ ষ্টুডেন্ট এসোসিয়েশন সহ দেশী বিদেশী বিভিন্ন সংগঠন ২১শে ফেব্রোয়ারী উপলক্ষে নানাহ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এবার বাংলাদেশ কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রান চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
দেশে দেশে বাঙালিদের আজ নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ এসেছে।ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন সংস্কৃতির মাঝেও আপন মহিমায় স্থান নিয়ে গড়তে হবে নিজ দেশের, নিজ সংস্কৃতির ভিত। অদ্ভুত এক শিকড়ের টানে এ বিশ্বে একুশের উষালগ্নে শিকড়সন্ধানী মানুষগুলো ছুটে যাবে মিনারের বেদিমূলে, সরবে উচ্চারণ করবে অতীতের যত বীরগাথা। হাজার মাইল দূরে এই হাড় কাঁপানো শীতে কানাডার এডমন্টনে বাঙালি অধ্যুষিত এ শহরে মানুষ ফুল দেবে শহীদ মিনারের পাদদেশে। জন্ম-জন্মান্তরের সেই আবহমান- বাঙালিত্ব বিশ্ব দরবারে তার স্থান করে নেবে।
লেখকঃ দেলোয়ার জাহিদ, সভাপতি বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা (বিপিসিএ) ও নির্বাহী সদস্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট