বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল গত ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ এক স্মারকপত্রে সংসদের কানাডা ইউনিট কমান্ড (আহবায়ক কমিটি) গঠনকরেছে। সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান,মেজর জেনারেল (অব:) হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম তা ঘোষণাকরেছেন। এ ১১ সদস্যবিশিষ্ট ইউনিটের - আহবায়ক : ড. জহিরুল ইসলাম, যুগ্ম-আহবায়ক : সাইফুল আলাম চৌধুরী,সদস্য সচিব : কর্ণেল(অব:) কাজী কায়সার উদ্দিন, সদস্য : মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন, সৈয়দ লুৎফুর রহমান, সঞ্জিত কুমার দাস, মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, আতিকুল ইসলাম মনি বীর প্রতীক, এহতেশাম আলী আনোয়ারুল মজিদ, মো: শহিদুল ইসলাম খান ও লেখকশা.জা. দেলোয়ার জাহিদ এর সমন্বয়ে গড়ে উঠা প্রবাসে এ বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদইউনিট কমান্ড।
৩০ লক্ষ শহীদের, দুই লক্ষাধিক মা বোনের সম্ভ্রম, ইজ্জত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন এ দেশ, এ স্বাধীন পতাকা- বাঙ্গালী জাতীর শ্রেষ্ঠ অর্জন এ মহান স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধে আত্বোৎসর্গকারীদের পরম শ্রদ্ধাভরে আমরা স্মরণ করি, স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যার অনুপ্রেরণায় জাতি একটি সার্বভৌম ভূ-খন্ড পেয়েছে। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০০২ (৮ নং আইন) প্রণীত হয়েছে জাতীর এ ত্যাগকে স্মরন করতে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যানার্থে কিছু কার্য্যাবলী সম্পাদন করতে গঠিত হয়েছে এ ইউনিট।এসকল কার্যাবলীর মধ্যে রয়েছেঃ
§ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষে জাতীয় পর্যায় সহ জেলা থানা ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মসূচী গ্রহণ।
§ মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য প্রযোজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ সহ সর্বোতভাবে পুর্ণবাসন।
§রাষ্ট্রীয় ও সমাজ জীবনের সকল স্তরে মুকিযুদ্ধের আদর্শ সমুন্নত রাখা ও কার্যকরী করার লক্ষ্যে সকল শ্রেণীর শিশু, কিশোর, যুবক, ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, কৃষক, মহিলা, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও সকল শ্রেণীর পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে অঙ্গ সংগঠন গঠন, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান।
§ মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধীকরণ।
§মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনের নিবন্ধীকরণ ফিস, নবায়ন ফিস ইত্যাদি নির্ধারণ।
§মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি রক্ষার্থে গৃহিত প্রকল্প পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান এবং ভবিষ্যত প্রকল্প গ্রহণ।
§সরকারী ও বেসরকারী ব্যক্তি সংস্থা ও সংগঠন কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস স্মৃতি আদর্শ সংক্রান্ত সৌধ ভাস্কর্য, যাদুঘর ইত্যাদি নির্মানের অনুমতি প্রদান রক্ষণাবেক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান।
§প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদপত্র ও প্রত্যয়ন পত্র প্রদানে এবং জাল ও ভূয়া সনদপত্র ও প্রত্যয়ন পত্র বাতিলের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ প্রেরণ।
§মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় সম্পর্কিত কার্যাবলী সম্পাদন।
বাংলাদেশের সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রচলিত আইন ও কর্মপরিধি খুবই তাৎপর্য্যপূর্ণ। তবে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনা প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন, নীতিনির্ধারনী কৌশল, সদস্যদের আগ্রহ ও সমন্বয়তা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের চেয়ারম্যান,মেজর জেনারেল (অব:) হেলাল মোর্শেদ খান বীরবিক্রম ইউনিটের প্রতি তার প্রাথমিক নির্দেশনায় কিছু বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এগুলো আমাদের সহযোদ্ধাদের দৃষ্টিগোচর করতে আলোচনায় আনতে চাই।
০বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা;
০মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা;
০কানাডাপ্রবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা;
প্রারম্ভেই উল্লেখ করা সঙ্গত যে, এ ইউনিট কমান্ডএকটি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের । কানাডায় অনেক আগ্রহী, ত্যাগী এবং গুনী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যারা ইতিমধ্যে প্রবাসে যুদ্ধাপোরাধীদের বিচারে জনমত গঠন সহ অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছেন, তাদের প্রতি আমরা ১১জন ও সহযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতা। অসমাপ্ত বাকী কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা প্রয়োজন, বিশেষতঃ মুক্তিযোদ্ধা ও এর স্বপক্ষ শক্তিগুলোর। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অত্যন্ত সুকৌশলে একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। আঘাত আসছে ভেতর ও বাইরে উভয় দিক থেকে। এ যেন একে একে নিবছে দেউটি, ১১টি সেক্টেরের ৬টিই যেন এখন রাজাকারদের দখলে! বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে বাঙ্গালীর জাতিসত্বা নিয়ে, বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে, বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে রাষ্ট্রের মহান স্থপতিকে নিয়ে, বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে এমনকি সেক্টর কমান্ডারদের নিয়ে...
সম্প্রতি বিতর্ক সৃষ্টি হলো মুক্তিযুদ্ধের উপ প্রধান সেনাপতি গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার এর লেখা ও তার আকস্মিক কিছু ভুমিকা নিয়ে। যিনি স্বাধীনতার পর পদোন্নতি পেয়ে এয়ার ভাইস মার্শাল হয়ে এবং বিমান বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডের পর বিমান বাহিনী প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন ১৯৭৬ -১৯৮২ পর্যন্ত এবং ১৯৮২ - ১৯৮৬ পর্যন্ত ভারতে, ১৯৮৬-১৯৯০ এবং ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য এ কে খন্দকার বীর উত্তম কে খেতাব এবং এ সরকারের আগের আমলে তিনি স্বাধীনতা পদক ও পেয়েছেন।
মেজর এম এ জলিল ৯ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন (বরিশাল, পটুয়াখালী ও খুলনা জেলার অংশ বিশেষ)। স্বাধীনতার পরপর জাসদ নামে একটি দল গঠন করেন।১৯৮৪ সালে তাকে জাসদের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর জাতীয় মুক্তি আন্দোলন নামে একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলেন। বোদ্ধাদের কাছে আজো অস্পষ্ট জাসদের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র কায়েমের আদর্শ থেকে হঠাৎ করে কিভাবে তিনি ইসলামী রাজনীতিতে ঝুকে পড়লেন।
মীর শওকত আলী সিলেট অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৫ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ও একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাকে সেনাবাহিনী থেকে পরবর্তীতে অবসর দিয়ে রাষ্ট্রদূতের চাকুরী দেয়া হয়। তিনি অতঃপর চাকরিচ্যুত হন এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হন।
মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিয়ে গঠিত ১ নম্বর সেক্টর ও পরবর্তিতে ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও রংপুর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ও জেড ফোর্সেরও প্রধান ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা পাঠ করেন।
মেজর কে এম শফিউল্লাহ ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার ওএস ফোর্সেরও প্রধান ছিলেন।
আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, টাঙ্গাইল এবং ময়মনসিংহ, ঢাকা ও পাবনা জেলার অংশ নিয়ে একটিবেসামরিক সেক্টর গড়ে তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাকে আদর করে বঙ্গবীরডাকতেন। তিনি বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একমাত্র বীরোত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন তিনি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নামে একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।
জীবন বাজি রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়াএকাত্তরের এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা কেই আজ খলনায়ক হিসেবে উপস্থাপন করছেন দেশের রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন এবং দেখেছেন তারাও কিন্তু এদের উপস্থাপন করছেন স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি হিসেবে, প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির দোসর হিসেবে।
এ কে খন্দকারথেকে শুরু করে মেজর এমএ জলিল, মীর শওকত আলী, মেজর জিয়াউর রহমান, কে এম শফিউল্লাহ, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকিতাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক মত ভিন্নতা থাকা খুবই স্বাভাবিক কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের ভুমিকাকে রাজনৈতিক বিবেচনার উর্দ্ধে নেয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার বিভেদ ও অনৈক্যের নিষ্ঠুর বলি হয়েছেন অগণিত মুক্তিযোদ্ধা। এর অনেক নজিরই রয়েছে তবে উদাহরন হিসেবে সাম্প্রতিক আলোচ্য বিষয়টিই আলোচনায় নেয়া যাক।
মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা হত্যায় এরশাদের বিচার দাবি/কোর্ট মার্শালের নথি সেনাবাহিনীতে নেই, দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪।
সেনাবাহিনীর সাবেক কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মেজর জেনারেল মো. আবুল মঞ্জুর ও সেনা বিদ্রোহে জড়িত থাকার মিথ্যা অভিযোগে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যায় এইচ এম এরশাদ জড়িত, তাঁরা এ জন্য এরশাদের বিচার দাবি করেছেন। ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তথাকথিত সেনা বিদ্রোহের প্রহসনমূলক সাজানো বিচারে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তার ফাঁসি হয়।
সেনা কর্মকর্তাদের কোর্ট মার্শালে বিচারের বিষয়ে ২০০১ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নেরও দাবি উঠে। ওই সংসদীয় কমিটির সদস্য কর্নেল (অব.) শওকত আলী বলেন, কোর্ট মার্শাল ও ফাঁসির রায় অন্যায্য ও আইনবহির্ভূত ছিল। তাই কোর্ট মার্শালের রায় বাতিলের জন্য তখন সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করেছিল। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন ও ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। তিনি ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ওই সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ বলেন, জেনারেল মঞ্জুর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। কারা কীভাবে গুলি করে, সেটা নিয়ে সেনাবাহিনীতে কোনো তদন্ত হয়নি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান, আবুল মঞ্জুর ও ১৩ সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচার হওয়া উচিত।
সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল হারুন-অর-রশিদ বলেন, সেনা কর্মকর্তাদের বিচারের জন্য গঠিত কোর্ট মার্শালের কোনো নথি সেনাবাহিনীতে নেই। এসবই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এসব সেনা কর্মকর্তার ফাঁসির দিনে নজিরবিহীনভাবে সব সেনানিবাসে কারফিউ দেওয়া হয়, যাতে সেনাসদস্য বা কর্মকর্তারা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারেন। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল কীভাবে এরশাদকে পাশে নেয়?কর্নেল (অব.) নুরুন নবী অভিযোগ করেন, ’৮১ সালে জিয়া-মঞ্জুরসহ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যায় এরশাদ জড়িত। মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন বলেন, ‘যাঁদের হারিয়েছি তাঁদের একমাত্র অপরাধ ছিল তাঁরা মুক্তিযোদ্ধা। জিয়া হত্যার অভিযোগ তাঁদের ওপর চাপিয়ে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
সে আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, ওই ১৩ সেনা কর্মকর্তাদের বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আইনসংগত ছিল। এগুলো বিবেচনার দাবি রাখে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা উচিত। তিনি এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করবেন বলে আশ্বাস দেন।...মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতের পদ থেকে এরশাদকে সরিয়ে দেওয়ার ও দাবি জানান।
মুক্তিযোদ্ধা সনদ জালিয়াতির হোতাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। জালিয়াতি করে মুক্তিযোদ্ধার সনদ নেয়ায় তিনজন সচিব ও একজন যুগ্ম-সচিবের নামে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করে আদেশ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ তালিকায় রয়েছেন- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী (বর্তমানে ওএসডি), স্বাস্থ্য সচিব নিয়াজ উদ্দিন মিয়া, সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সচিব এ কে এম আমির হোসেন এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (ওএসডি) আবুল কাসেম তালুকদার।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সাহসকিতাপূর্ণ অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর পদক বিতরণ নিয়ে ও পক্ষপাতিত্বের জোড়ালো কতগুলো অভিযোগ তুলেছেন মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া এমপি। মুক্তিযোদ্ধাদের গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড বিতরণ নিয়ে বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্বের এ অভিযোগগুলোকে মোটেই খাট করে দেখার অবকাশ নেই। সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম তালুকদারের প্রকাশিত এ প্রতিবেদনটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যে গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড বা সাহসিকতা পদক বিতরণ করা হয়েছে তা নিয়ে চরম পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
যারা জীবন বাজি রেখে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে গৌরবোজ্জ্বল সাফল্য ছিনিয়ে আনার পাশাপাশি পাকিস্থানী হানাদারদের কাছে ছিলেন সাক্ষাৎ যমদূত তাদের অনেকেই কোন পদক পাননি। আবার এমন অনেকেই পদক পেয়েছেন যারা মুক্তিযোদ্ধা হলেও পদক পাওয়ার মতো কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি বা কোন কোন ক্ষেত্রে তারা মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য সরবরাহ করে নানাহ সুবিধা বা ফায়দা লুটেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসকিতাপূর্ণ অবদানের জন্য গ্যালান্টারি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির নিঃসন্দেহে হকদার হওয়া সত্বেও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন এমন ভৈরবের দুই মহান মুক্তিযোদ্ধা শহীদ নুরু ও আতিক। তাদের একজন গর্বিত সহযোদ্ধা হিসাবে মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়ার মতো আমি ও এ বৈষম্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন যাবত।এই অ্যাওয়ার্ডগুলো- ‘বীরশ্রেষ্ঠ’, ‘বীরউত্তম’, ‘বীরবিক্রম’ও ‘বীরপ্রতীক’নির্ধারন ও এর বিতরণ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এখনো বিষয়টি নিস্পত্তি করা সম্ভব।
গত ২১ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিটের প্রথম সভা ডক্টর জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় এবং ইউনিটের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কানাডায় বসবাসরত সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য আপাতত মেগা সিটি মন্ট্রিয়ল, অটোয়া ও টরেন্টো তে আহবায়ক সাব-কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আসন্ন ডিসেম্বর ২০১৪ তে বিজয় দিবস উদযাপন, তহবিল সংগঠন, সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
আমাদের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এ মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই জন্মলাভ করেছে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রাণপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। কানাডায় আমরা ১১জন দীপ্ত শপথে এগিয়ে যাবো পাহাড়সম সমস্যা ডিঙ্গিয়ে। বাংলাদেশ যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে নবযাত্রা শুরু করেছিলো সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে, শোষিতশ্রেণীর মানুষের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সহায়ক হবো ।দলমত নির্বিশেষে আত্মশক্তিতে বলীয়ান স্বাধীন অর্থনীতি গড়ে তুলতে, জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের জন্য দারিদ্র্যমুক্ত ও সমতাধর্মী জীবন ব্যবস্থা তৈরি করতে আমরা জাতীয় মুক্তির অধুরা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবো..।
লেখকঃ মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ,সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাবঅব আলবার্টা, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ডএথনিকসোসাইটি অব আলবার্টা, প্রধান উপদেষ্টা মাহিনুর জাহিদ মেমোরিয়েল ফাউন্ডেশনএবং সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কানাডা ইউনিট কমান্ড।
ফোনঃ ১ (৭৮০) ২০০-৩৫৯২।