নয়াদিল্লী, ১৫ আগস্ট ২০১৫ (বাসস) : ভারতের ৬৯তম স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ভারতে জাতিভেদ প্রথা ও সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই। উন্নয়নের হাত ধরেই এই দু’টাকে পরাজিত করতে হবে। তিনি বলেন, দেশে জাতিভেদ প্রথা ও সাম্প্রদায়িকতা সহ্য করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের ৬৯তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণের আগে নয়াদিল্লীতে ১৭ শতাব্দীর প্রাচীন স্থাপত্য নির্দশন লালকেল্লায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে জাতিকে আন্তরিক ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে মোদি বলেন, এই দিনটি ভারতের ১২৫ কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্নের দিন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী মহান ব্যক্তিবর্গের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
ভাষণের আগে প্রধানমন্ত্রী গার্ড অনার পরিদর্শন করেন এবং রাজঘাটে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রাজধানী নয়াদিল্লীকে বহু স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়। সম্ভাব্য যে কোনো সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে নগরীজুড়ে ৪০ হাজার নিরাপত্তা কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়।
এদের মধ্যে ১২ হাজার সদস্য নেয়া হয় আধাসামরিক বাহিনী ও দিল্লী পুলিশ থেকে। এদের অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ দেয়ার স্থান লালকেল্লার চারপাশে মোতায়েন করা হয়।
মোদি বলেন, বেচিত্রের মাঝে ঐক্যই ভারতের নাগরিকদের স্বপ্ন পূরণের পথে চালিত করবে।
মোদি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ একটি গণতান্ত্রিক দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি বলেন, ১২৫ কোটি ভারতীয়ের টিম দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, সারল্য ও ঐক্য ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি বলেন, ভারতের ঐক্য বিনষ্ট হলে জনগণের স্বপ্নও ভেঙে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে গরীবের উপকার হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, তার সরকার সামাজিক নিরাপত্তার ওপর দৃষ্টি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বীমা যোজনা ও অটল পেনসন যোজনা চালু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আস্থা ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি দেশকে ঘুন পোকার মতো কুঁরে কুঁরে খাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, দেশের মানুষ স্বচ্ছতা চায়।
তিনি বলেন, এমনকি দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের মধ্যে অন্যদেরও দুর্নীতি করার উপদেশ দেয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তিনি দুর্নীতি দমনে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, সরকার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত উপায়ে কয়লা ও এফএম রেডিও স্পেক্ট্রাম নিলাম দিয়েছে।
মোদি বলেন, সরকার গত এক বছরে বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আর এনডিএ সরকার ক্ষমতায় আসার দিনই সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে একটি এমআইটি গঠন করেছিল।
তিনি বলেন, কালো টাকা সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে এমন অনেক দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, যাতে কেউ দেশ থেকে কালো টাকা বাইরে স্থানান্তর করতে না পারে সেজন্য কঠোর আইন করা হয়েছে।
মোদি দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, সরকার সে লক্ষ্যে কাজ করছে।
অপর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত দেশের অর্থনীতি ও কৃষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। এটি ডাবল ডিজিট থেকে কমিয়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশ নামিয়ে আনা হয়েছে।
কৃষকদের সৈনিকদের মতোই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মোদি বলেন, সরকার তাদের স্বার্থে নতুন গ্যাস ও ইউরিয়া নীতি প্রণয়ন করেছে। কৃষকদের সহায়তার জন্য যুবকদের চাকরি দিয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষকরা যত চান তত সার পাবেন।
তিনি বলেন, সরকার ইউরিয়ার শতভাগ নিম আবরন সম্ভব করেছে। ফলে এটি এখন কেবল কৃষিতেই ব্যবহার করা যাবে। কারখানায় ব্যবহার করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলো উন্নত না হওয়া পর্যন্ত ভারত উন্নত হবে না।
তিনি বলেন, এসব অঞ্চলে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে এবং রেল লাইন উন্নয়ন করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতে একটি স্টার্ট আপ নেটওয়ার্ক স্থাপনের আহ্বান জানান।
তিনি সকল ব্যাংককে স্টার্ট আপ বিপ্লবে অবদান রাখার আহ্বান জানান, যাতে ভারত নিশ্চিতভাবে স্টার্ট আপদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে।