তিনি বলেন,‘ক্ষুদ্রঋণ মানে দারিদ্র্য বিমোচন নয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা না পেলে শুধু ক্ষুদ্রঋণ দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে না। তবে ঋণ দারিদ্র বিমোচনের একটা অংশ। আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি ক্ষুদ্রঋণ এক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখছে।’ তবে ক্ষুদ্রঋণকে তিনি দারিদ্র বিমোচনের শক্তিশালী হাতিয়ার বলে অভিহিত করেন।
রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ২৫ বছরে পদার্পন উপলক্ষে ‘বর্ষব্যাপী রজতজয়ন্তী উদযাপনে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পিকেএসএফ পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ও পিকেএসফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল করিম বক্তব্য দেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আর আমরা মঙ্গার কথা শুনি না। কিন্তু ৫ বছর আগেও মঙ্গা নিয়ে আমাকে তটস্থ থাকতে হতো। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি ক্ষুদ্রঋণ মঙ্গা দূরীকরণে ভূমিকা রেখেছে।’
মুহিত বলেন, ‘গরীবরা ঋণ পরিশোধ করে এটা সবাই বিশ্বাস করে। এই ধারণা থেকে মোহাম্মদ ইউনুস ক্ষুদ্রঋণ চালু করেন। এরপর এই ধারণা নিয়ে আরো অনেকে এগিয়ে আসে। কিন্তু পুঁজি ও নেতৃত্বের অভাবে অনেক উদ্যোগ সফল হচ্ছিল না। যাদের পুঁজির অভাব তাদেরকে সহায়তা করতে সৃষ্টি হয় পিকেএসএফ। এটি বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব চিন্তা থেকেই আসে। দেশের অনেকগুলো ভালো কাজের মধ্যে এটি একটি।’
বাংলাদেশে ক্ষুদ্রঋণের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিকেএসএফ প্রতিষ্ঠার আগে ১৯৮৬ সালে মোট ঋণপ্রবাহের মাত্র ৪ শতাংশ ছিল ক্ষুদ্রঋণ। যার পুরোটাই দিতো গ্রামীণ ব্যাংক। কিন্তু বর্তমানে মোট ঋণপ্রবাহের ৩৩ শতাংশ ক্ষুদ্রঋণ। এই ঋণের ৫ শতাংশ পাচ্ছে নারীরা।
বর্তমানে সরবরাহকৃত ক্ষৃদ্রঋণের এক-তৃতীয়াংশ গ্রামীণ ব্যাংকের বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকার শিক্ষা প্রসারে নানান উদ্যোগ নিয়েছে। যে কারণে প্রাথমিক শিক্ষার হার এখন শতভাগ। ঝরে পড়াও কমেছে। সেক্ষেত্রে ক্ষুদ্রঋণের অবদান রয়েছে। এছাড়া অনেক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। যাদেরকে সহযোগিতা করছে পিকেএসএফ।
পিকেএসএফের অর্থায়নে দরিদ্র শিশুদের জন্য যেসব শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে- তা সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে তিনি জানান।
পিকেএসএফের সভাপতি কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, পিকেএসএফ দেশের ক্ষুদ্রঋণ সম্প্রসারণের পাশাপাশি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি এ কার্যক্রম আগামীতে আরো বাড়বে।
আগামী বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেওয়ায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান খলীকুজ্জমান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও নারীদের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক লতিফা আকন্দ এবং অধ্যাপক জাহানারা হককে ফাইন্ডেশনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ প্রদানের জন্য সরকার ১৯৯০ সালে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে।
বর্তমানে সংস্থাটি ২৭২টি এনজিওকে অর্থায়ন করছে। এসব এনজিওকে সংস্থাটি ১৭ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। যা এনজিওগুলো ঘূর্ণায়নমান পদ্ধতিতে মোট এক লাখ ৬৭ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। ৮০ লাখ ৮৮ হাজার ৪৪২ জন এসব ঋণ গ্রহণ করেছেন।