১৯৬৪ সালের ৪ঠা নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা ,বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেস্কো'র সাধারণ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মূলনীতি ঘোষিত হয়। এ ঘোষণার মাধ্যমে মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সংহতির ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত। সংবিধান ছাড়াও সংস্কৃতির ব্যাপক আশ্লেষ, ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং শান্তি, মানবতার শিক্ষা, মানুষের মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠা করা, সন্মান প্রদর্শনের অপরিহার্যতাকে তুলে ধরা সহ সমস্ত জাতির পারস্পরিক সহায়তা ও উদ্বেগের উপর গুরুত্বারূপ করা এ ঘোষণার মূল কথা।
যুক্তরাষ্ট্র এ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সদস্য । সত্য, ধারণা ও জ্ঞানের বিনামূল্যে বিনিময়, বিশ্বাস,একমত এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম বিকাশ ও বৃদ্ধি নির্ধারণ করা। যে বিবেচনা জ্ঞান ও ধারণার উন্নয়ন এবং প্রচারে সহজতর উপায়, যা প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সত্ত্বেও জনগণের জীবন ও প্রথাগত পথে অজ্ঞতা দূর করতে শান্তিপূর্ণ ভাবে সহযোগিতা করা। মানবজাতির অগ্রগতি, জাতি জাতিতে বন্ধুত্বের পথে প্রতিটি অন্তরায় চিহ্নিত ও উপস্থাপন করে বিবেচনায় আনা। যার মধ্যেঃ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা ,শিশু অধিকার ঘোষণা , ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগন ,সর্বস্তরে জাতিগত বৈষম্য বা রেশিয়াল ডিসক্রিমিনেশন দূরীকরণে জাতিসংঘের ঘোষণার বাস্তবায়ন,জনগণের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও বুঝ, রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন বিষয়ে মধ্যস্থতা এবং তা রক্ষার বিষয়গুলোকে ধারাবাহিকভাবে প্রচার করা।
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতা জোরদার করার নীতি খুবই তাৎপর্যবহ এবং একে প্রতিটি রাষ্ট্রের অনুমোদন করা একান্ত প্রয়োজন।সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীত্বশীল সরকার,কর্তৃপক্ষ, সংগঠন,সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত এই নীতির দ্বারা পরিচালিত হতে পারে। এ উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতা ও এ মূলনীতির আলোকে শিক্ষা বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিষয়ে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রনীত হতে পারে। তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে (দেশে দেশে) সাংস্কৃতিক দূরত্ব কমে আসবে। সাংস্কৃতিক সংঘাতের পরিবর্তে সহনশীলতা ও বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিটি সংস্কৃতির সম্মান, সংরক্ষণ ও মর্যাদা কে মূল্য দেয়া,
প্রতিটি মানুষ এর সংস্কৃতির বিকাশে অধিকার ও দায়িত্ব সৃষ্টি,
তাদের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য ও বৈচিত্র্যের মধ্যে,তারা একে অপরের উপর তা প্রয়োগ, পারস্পরিক প্রভাব ,সব সংস্কৃতি সমস্ত মানবজাতির একাত্মতার সাধারণ ঐতিহ্যকে ধারন,
জাতির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক অগ্রগতি মধ্যে একটি সুরেলা ভারসাম্য স্থাপন করা,সে হিসাবে যথাসম্ভব একযোগে সংস্কৃতির দিকে বিভিন্ন শাখা এবং এগুলো বিকাশের উপক্রম হবে।
আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতা শিক্ষা,বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত মেধা ও সৃজনশীল কর্মকান্ডে সকল বৈশিষ্ট্য অবারিত হবে।
· দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক এর বিভিন্ন ফর্ম,আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার লক্ষ্য ; আঞ্চলিক বা সার্বজনীন হবে,
· জ্ঞান ছড়িয়ে প্রতিভা উদ্দীপিত ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি সাধিত হবে;
· জনগণের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের বিকাশ এবং জীবনের একে অপরের ভাব ভাল করে বুঝতে সমর্থ হওয়া;
· এই ঘোষণার প্রস্তাবনার মধ্যে যে জাতিসংঘের সেট আউট নীতি প্রয়োগ হয়েছে তা তুলে ধরা;
· সবাই জ্ঞান লাভে প্রবেশাধিকারের জন্য,সক্রিয় সব মানুষের চারু ও সাহিত্য ভোগ , বিশ্বের সব অংশে এবং বিজ্ঞানের তৈরি অগ্রগতি ভাগ করে এবং সাংস্কৃতিক জীবনের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখে;
· বিশ্বের সব অংশের মানুষের আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত জীবন মাত্রাকে বাড়াতে হবে.
সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মাধ্যমে একে অপরের প্রতি তাদের জ্ঞান এবং দক্ষতার বিনিময় করা উচিত,যা সব মানুষের এবং সব জাতির জন্য একটি অধিকার ও দায়িত্ব...
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা , তার দয়াময় কর্মকান্ডের মাধ্যমে সব সংস্কৃতির সমৃদ্ধি প্রচার,যখন প্রতিটি স্বতন্ত্র চরিত্রকে সম্মান করবে, সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বন্ধুত্বের একটি আত্মা যা অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষা,আন্তর্জাতিক বোঝ ও শান্তির সঙ্গে বিশেষভাবে বসবাসের প্রতিভায় উদ্দীপিত এবং সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান প্রজন্মের জন্য প্রশিক্ষণ উন্নীত করার প্রয়োজনে রাষ্ট্র সচেতনভাবে তার ভুমিকা লালনপালন করবে।
এই আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ঘোষণা ও মূলনীতির ভাবধারায়- মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষা ও কার্য্যকরনের জন্য আমাদের বাংলাদেশী সংগঠনগুলো ও তাদের কাজ করছে।
কানাডা একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পন্ন বড় দেশ। সৃজনশীল ও প্রতিভাবান মানুষ দ্বারা পূর্ণ এ দেশ! যারা বছরে $৪৬ বিলিয়ন উৎপন্ন করে এবং ৬,৩০,০০০ এর উপর লোক এখানে কাজ করে। কানাডিয়ান সংস্কৃতি কানাডার অর্থনীতিকে পূর্ণ সমর্থন করে। আর এ সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের সম্মিলিত সংস্কৃতির সমন্বয়ে।
বাংলাদেশ হেরিটেজ এবং এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা (BHESA) বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে কানাডার আলবার্টা প্রদেশে বেশ সফলতার সাথে তুলে ধরেছে। এডমন্টন সিটি ও নিকটবর্তী এলাকায় তাদের প্রচার ও প্রসার লক্ষ্যনীয় মাত্রায় বেড়ে চলেছে। BHESA একটি অরাজনৈতিক ,অসাম্প্রদায়িক ,সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অলাভজনক সংস্থা। BHESA আমাদের ক্রমবর্ধমান সম্প্রদায়ের আকৃতি অনুযায়ী সাহায্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে যা আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সহযোগিতার ঘোষণা ও মূলনীতির ভাবধারার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
বাংলাদেশী স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন অব আলবার্টা ইউনিভার্সিটি (BSAUA) বাংলাদেশী ছাত্রদের একটি নিবন্ধিত সংগঠন। এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বাংলাদেশী ছাত্রদের সমষ্টিগত কল্যাণের জন্য সেবা কার্যক্রমগুলো প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব এডমন্টন ( BCAE ) বাংলাদেশী অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এর প্রতিষ্ঠা লগ্ন অর্থাৎ ১৯৭৯ সাল থেকে। এর সাংস্কৃতিক ,সামাজিক ও অলাভজনক কাজের দীর্ঘ ঐতির্হ্য রয়েছে।
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কালগেরী (BCAOC) ১৯৬৪ সালে এর যাত্রা শুরু। কানাডায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে টেলিভিশনে (১৯৭১ সালে) স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বলিষ্ট ভুমিকা রাখে। স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী সময়ে এখানে মাইগ্রেট করতে বাঙ্গালীদের তা অনেক সাহায্যে এসেছে। এ এসোসিয়েশন ও প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে।
বাংলাদেশের সংস্কৃতি স্বদেশের গন্ডি পেরুয়ে প্রবাসে ও তার স্থান দখল করে নিয়েছে। নিবন্ধিত, অনিবন্ধিত এমন সংগঠনের সংখ্যা প্রবাসে নিতান্ত কম নয়, তবে স্থানাভাবে তাদের সকলের কথা এখানে তুলে ধরা সম্ভব না হলেও তাদের প্রয়াসকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতে হয়। বাংলাদেশের মানুষের জীবনের পথ বিবর্তিত সামাজিক গোষ্ঠী,সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য,বাংলার ১৯ হাজার রেনেসাঁ এবং ২০ শতাব্দীর বাংলা লেখক,বিজ্ঞানী,গবেষক,সঙ্গীত,চিত্রশিল্পী এবং চলচ্চিত্র প্রস্তুতকারকদের তথা চিন্তাবিদদের এ সংস্কৃতির উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকার প্রশংসা করতে হয়। বাংলার রেনেসাঁ একটি জায়মান যাতে রাজনৈতিকভাবে জাতীয়তাবাদের বীজ রয়েছে এবং আধুনিক ভারতীয় শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পূরোধা বলা চলে বাঙ্গালীদের। বাংলাদেশের সংস্কৃতি যৌগিক, শতাব্দী ধরে ইসলাম,হিন্দু,জৈন,বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টান প্রভাব এতে সম্পৃক্ত করেছে। শিল্প নৈপুণ্য ও লোকাচারবিদ্যা এবং ভাষা ও সাহিত্য ;দর্শন ও ধর্ম ; উৎসব ও তা পালনের মধ্যে এ সংস্কৃতি বিকশিত হয়েছে এবং এর মাধ্যমে মানবজাতির বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক সংহতির সাথে একাত্ম হয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতির ব্যাপকতা ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং শান্তি, মানবতার শিক্ষা ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শরীক করেছে। এ নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে প্রবাসে ঐব্দ্ধক্য ও সমন্বিত কাজ করতে হবে।
লেখকঃ প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন অব হিউম্যান রাইটস, কুমিল্লা প্রেসক্লাব ও কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, কানাডা'র আলবার্টা ও সাস্কাচুয়ান প্রদেশের কমিশনার অব ওথস, এডমোনটন সিটি নিবাসী। ফোনঃ ১ (৭৮০) ২০০-৩৫৯২ এবং (৭৮০) ৭০৫-০১১৭...