ঢাকা, ৭ এপ্রিল, ২০১৪ (বাসস) : রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে ইতিবাচক ছাত্র রাজনীতি চর্চা করার জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৪৮তম সমাবর্তনে ভাষণদানকালে বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সমাবর্তনে ৪ হাজার ১৫ ছাত্র এবং ৪ হাজার ২৯৭ ছাত্রীসহ মোট ৮ হাজার ৩১২ শিক্ষার্থীকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি ডিগ্রি দেয়া হয়।
কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ৩৪ শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক এবং ৩৮ জনকে পিএইচডি, ২৫ জনকে এমফিল ও ৩৪ জনকে এমডি-এমএস ডিগ্রি দেয়া হয়।
আবদুল হামিদ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাত্রিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডকে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিবিপ্লব হিসেবে অভিহিত করে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয়ী হলেও ’৭৫-র এই প্রতিবিপ্লবের ফলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই, প্রগতি ও প্রতিক্রিয়ার লড়াই, শুভ ও অশুভের লড়াই, ধর্মপরায়ণতা ও ধর্মান্ধতার লড়াই আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে শেষ হয়ে যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমরা আবার ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছি। আজকের লড়াইয়ে শুভশক্তি জয়ী না হলে, রাষ্ট্র হিসেবে, জাতি হিসেবে, আমরা আবার পিছিয়ে যাবো। আমরা আবার পরিচিতি লাভ করবো উগ্রবাদী, সন্ত্রাস, ধর্মান্ধ, পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে। মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অগ্রগতির চাকা। জাতি হিসেবে আমরা হবো নিন্দিত।’
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা কার্যক্রমের পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চাহিদাভিত্তিক ও কর্মভিত্তিক শিক্ষা এ যুগে একান্তভাবে প্রয়োজন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রে বিশ্ব প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পেশাভিত্তিক প্রচলিত ও অপ্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের জনগণের জন্য ভালোবাসা, মানবতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক কৌশল সম্পর্কে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সার্টিফিকেটমুখী শিক্ষা বা শুধুমাত্র পাঠ্য বই পড়া বা গাইড বই মুখস্ত করার ওপর নির্ভরশীল শিক্ষা নয়Ñবরং আমাদের এমন শিক্ষা প্রয়োজন, যা সৃষ্টিশীল ও আলোকিত মানুষ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বলেন, শিক্ষা হবে বন্ধ অন্ধকার ঘরের জন্য একটি উন্মুক্ত জানালা।
রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের দেশের উচ্চতর মানবসম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আজকের এই সমাবর্তন আপনার অর্জনের স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং অপরদিকে আপনার ওপর দায়িত্বও বেড়েছে। এই দায়িত্বগুলো হলোÑআপনার পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি দেশ ও জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব।
রাষ্ট্রপতি হামিদ গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্য করে বলেন, দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হতাশ হলে হবে না, বরং সাহসী হতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরমাণু গবেষণা বিষয়ক ইউরোপীয় সংস্থার মহাপরিচালক অধ্যাপক রোলফ ভিটার হিউর বক্তব্য রাখেন। বিশিষ্ট বিজ্ঞানীকে ডক্টর অব সাইন্স ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।