ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুড়িয়ে মানুষ হত্যাকারীদের দেশ, জনগণ ও মানবতার শত্রু হিসেবে উল্লেখ করে এ ধরনের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, যখন দেখি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, মুরগিবাহী ট্রাক ও পাঠ্যপুস্তক বহনকারী যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে, তখন আমি গভীরভাবে বেদনাহত হই। তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় মানুষ এ ধরনের অমানবিক কাজ করতে পারে।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা আন্দোলন নয়। যারা এ ধরনের অপরাধ করছে তারা দেশ, জনগণ ও মানবতার শত্রু। আমি এ ধরনের জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার এবং তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বহুবার প্রাকৃতিক ও মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করেছে। গত একমাস দেশ মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে। আমরা এই পরিস্থিতি অতিক্রম করবো ইনশা আল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী আজ বিকেলে রাজধানীতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি মেলা ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফ্টওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস (বেসিস) যৌথভাবে চার দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ মেলার লক্ষ্য হচ্ছে আইটি খাতের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে তুলে ধরা। মেলা আয়োজনে এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলর সহায়তা করেছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। এতে বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান স্বাগত বক্তব্য দেন। এছাড়া আইসিটি সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদারও বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির কংগ্রেসম্যান মাইক হোন্ডার একটি ভিডিও মেসেজ দেখানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষ আছে যারা দেশের উন্নয়ন দেখেন না। চোখ থাকা সত্ত্বেও তারা অন্ধ। যারা উন্নয়ন থেকে অন্ধকারের দিকে দেশকে ঠেলে দিতে চায় তাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার বর্তমান সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও জনগণের ক্ষমতায়নে তথ্যপ্রযুক্তির লাগসই ব্যবহার নিশ্চিত করা। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষে প্রযুক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করা। ধনী-গরীব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে ‘প্রযুক্তি বিভেদ’ মুক্ত দেশ গড়ে তোলা।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্য অর্জনে কম্পিউটারের পাশাপাশি আমরা মোবাইল ফোন, রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আইটি শিল্পের উন্নয়ন ও এ খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার চাহিদা পূরণে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আইটি শিল্প থেকে ৩৪ হাজার মানুষ সুফল পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বেসরকারি খাতের ইতিবাচক ভূমিকা প্রশংসনীয়। বেসিস এ শিল্পের জন্য ২৩ হাজার উপযুক্ত জনবল তৈরি করছে। এর পাশাপাশি বেসিস ২০১৮ সালের মধ্যে ১০ লাখ নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সৃষ্টিতে কাজ করছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আইটি খাতের সুনাম দিন দিন দেশে এবং দেশের বাইরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি সফটওয়্যার ও আইটি সেবা বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইটি খাত থেকে রফতানি আয় পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং গড়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৫০ ভাগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইটি শিল্পের উন্নতির জন্য সরকার আইসিটি আইন এবং আইসিটি নীতি প্রণয়ন করেছে। হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে এবং বিভিন্ন জেলায় অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী আইটি শিল্পের উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ই-গভর্নন্সে সম্প্রসারণ, সাবমেরিন ক্যাবলের ক্ষমতা বৃদ্ধি, মূল্য হ্রাস করে ইন্টারনেট সার্ভিস আরো সহজলভ্য করা, থ্রি-জি মোবাইল সার্ভিস চালু, ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়ন, ৩২১টি পৌরসভা ও ৪০১টি ওয়ার্ডে ডিজিটাল কেন্দ্র স্থাপন, ডিজিটাল ইনোভেশন মেলার আয়োজন এবং সকল জেলা প্রশাসনে ই-সেবা চালু করা এবং ২৫ হাজার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওয়েব পোর্টাল চালু করার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আইটি খাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এ খাতে বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে অবকাঠামো সুবিধাসহ উদ্যোক্তাদের আকর্ষণীয় সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আইটি খাতে বিনিয়োগ করার জন্য আমরা বিশ্বের বড় কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এবং তাদের সবধরনের সহায়তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আইটিভিত্তিক উন্নয়ন করায় বিশ্বের মানুষের সুনাম অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে তিনি সাউথ সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি এ্যাওয়ার্ড, আন্তজাতিক টেলিকম ইউনিয়ন থেকে ডব্লিউএসআইএস এ্যাওয়ার্ড এবং ডব্লিউআইটিএ থেকে গ্লোবাল আইসিটি এক্সলিলেন্স এ্যাওয়ার্ড লাভের কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী জ্ঞান, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে একটি কল্যাণমূলক শান্তিপূর্ণ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দল-মত-নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার থ্রি-জি প্রযুক্তি চালু করেছে এবং খুব শিগগির ফোর-জি প্রযুক্তি চালু হবে।
জয় আরো বলেন, আইসিটি এবং আয় ও শিক্ষা প্রকল্পের অধীন ইতোমধ্যেই ১৮ হাজার লোক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। আমরা এই প্রকল্পের অধীন ৫০ হাজার লোককে প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, দেশের জনগণকে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দিতে সারাদেশে সকল ইউনিয়ন পরিষদে ফাইবার অপটিক্যাল পৌঁছে দেয়া হবে। তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আইটি খাত এখন পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা পরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৫ উপলক্ষে বিআইসিসিতে আয়োজিত মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন।