ঢাকা, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ (বাসস) : টইটুম্বর বলতে যা বোঝায়, অমর একুশের গ্রন্থমেলার অবস্থা আজ তা-ই। প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় আজ মেলার দ্বার খুলেছিল বেলা ১১টায়।
এরপর থেকেই গ্রন্থানুরাগীরা আসতে শুরু করেন মেলার উভয় প্রান্তে। যে সকল পাঠক ভিড়ভাট্টা একটু কম পছন্দ করেন তারা সকাল বেলাই মেলা চত্বর ঘুরে বই কিনেছেন বলে জানান প্রকাশক ও বিক্রেতারা।
তবে বিকাল তিনটার পর থেকে যেন মানুষের ঢল নামে মেলা চত্বরে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের একাধিক পথ থাকায় সব পথ দিয়েই বইপ্রেমীরা এসে জমায়েত হয়েছে মেলা প্রাঙ্গণে। আর বাংলা একাডেমি চত্বরে প্রবেশের জন্য তো পাঠকদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ঢুকতে হয়েছে মেলায়। সন্ধ্যার পর তো এ লাইন একদিকে টিএসসি ও অন্যদিকে দোয়েল চত্বরের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকেছে। সন্ধ্যার পর মেলায় উভয় প্রান্ত পরিণত হয়েছে জনসমুদ্রে।
বানের পানির মত মানুষের মেলা প্রাঙ্গণে আগমনের কারণে আজ মেলা চত্বর ছিল ধূলায় ধূসরিত। যাদের শ্বাস কষ্ট ছিল তারা তড়িঘড়ি করে বের হয়ে গেছে মেলা চত্বর থেকে। অন্যদেরকে মুখে কাপড় বা রুমাল চেপে হাটতে দেখা গেছে।
পরিবার-পরিজন বা প্রিয়জনকে নিয়ে আসা পাঠক-দর্শনার্থীরা শুধু মেলা চত্বর চষেই বেড়াননি, সেই সঙ্গে কিনেছেন বইও। এদিন দেদারসে বেচা-বিক্রি হওয়ায় প্রকাশকরাও বেশ খুশি।
এ প্রসঙ্গে এ্যাডর্নের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। আজ শুক্রবার প্রচুর পাঠকের সমাগম ঘটেছে। তাদের প্রত্যেকেই হয়তো বই কেনেনি, কিন্তু তাদের এ আগমন আমাদের জন্য উৎসাহব্যাঞ্জক।
একই অভিমত ব্যক্ত করলেন ঐতিহ্য প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি কাজল। তিনি বলেন, আজকেই মূলত মেলা শুরু হলো। কারণ, এ কয়েকদিন ভিড় হলেও বিক্রি তেমন একটা হয়নি।
বইয়ের মেলায় শুধু বই কিনতেই আসে সবাই, তা নয়। অনেকে আসেন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। আজ এমনও একাধিক দল দেখা গেছে মেলায়। তাদের লক্ষ্য, পছন্দ হলে বই কিনবো, না হলেও সমস্যা নেই। বন্ধু-বান্ধব মিলে চুটিয়ে আড্ডা তো দেয়া যাচ্ছে।
ছুটির দিন থাকায় আজ শিশুদের আগমন দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য। বাবা-মা’র হাত ধরে বা কাঁধে চড়ে এসব শিশুরা নিজেদের মতোই ঘুরেছে ও বই কিনছে। এমন অনেক শিশুর মুখেই দেখা গেছে প্রশান্তির হাসি।
মেলার নজরুল মঞ্চের পাশে অংশে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে ক্ষুদে পাঠকদের অনেকগুলি বইয়ের দোকান। এখানে কথা হলো ক্ষুদে পাঠক তামান্নার সঙ্গে। সে বাবার সঙ্গে বই কিনতে এসেছে। বাসসকে বললো, তার পছন্দ রূপকথার বই। সে রূপকথার দুইটা বই কিনেছেও।
লেখকদের কথা
লেখকদের মধ্যে আজ মেলায় এসেছিলেন হাবীবুল্লাহ সিরাজী, ইমদাদুল হক মিলন ও আনিসুল হক। ছুটির দিনে কেমন মেলা জানতে চাইলে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আজকেই তিনি প্রথমবার মেলায় এসেছেন। প্রচুর মানুষের সমাগমে তার মনটা ভালো হয়ে গেলো বলে জানালেন।
আনিসুল হক বলেন, অনেক পাঠকের দেখা পাচ্ছি। এতে প্রকাশনীগুলোর বিক্রি ভালো হচ্ছে। সবমিলিয়ে ছুটির দিনে জমে উঠেছে মেলা।
মেলায় আইটির বই
দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বর্তমান সরকারের। এ লক্ষ্যে বর্তমান সরকার গত মহাজোট সরকারের আমল থেকেই তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে দেশব্যাপী কাজ করে চলেছে। সরকারের সেসব ক্ষেত্রে সাফল্যই ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নপূরণের অভিযাত্রা’ বইটিতে তুলে এনেছেন বইটির লেখক অজিত কুমার সরকার।
তথ্য ও জ্ঞানের অভিগম্যতাকে সার্বজনীন ও সহজলভ্য করার সুযোগ তৈরি করা গেলে তা মানুষের জীবনে যে অভাবনীয় সাফল্য বয়ে আনতে পারে, তারই নানা দিক উঠে এসেছে এ বইটিতে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই যে সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তারও নানা ধারণা পাওয়া যাবে এ বইটি থেকে। মেলায় বইটি পাওয়া যাচ্ছে শ্রাবণ প্রকাশনীর স্টলে।
নতুন বই ও মোড়ক উšে§াচন
একাডেমির সমন্বয় ও জনসংযোগ উপবিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী আজ মেলায় এসেছে ১৭৩টি নতুন বই। এর মধ্যে গল্প ২২, উপন্যাস ৩১, প্রবন্ধ ১১, কবিতা ৩২, গবেষণা ৩, ছড়া ২, শিশুসাহিত্য ৭, জীবনী ৭, মুক্তিযুদ্ধ ৬, নাটক ২, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ৯, ইতিহাস ৪, রাজনীতি ২, স্বাস্থ্য ১, কম্পিউটার ২, রম্য ৬, ধর্মীয় ৩, অনুবাদ ২, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ১ ও অন্যান্য বিষয়ের উপর ১২টি নতুন বই এসেছে। এনিয়ে মেলার প্রথম সপ্তাহে মোট ৪৬৩টি নতুন বই এসেছে।
মেলার সপ্তম দিনের মধ্যে আজই নজরুল মঞ্চে সবচেয়ে বেশি বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। সে সংখ্যা ২৯টি।
আজকের উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে বিভাস এনেছে আতা সরকারের ‘কালো ধারাপাত’, আলম তালুকদারের ‘বিশ একুশের ছড়া’, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহের ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ ও ‘কবিতা সমগ্র’এর নতুন সংস্করণ, কাকলী এনেছে রোহিত হাসান কিছলুর ‘মজা লস’, মিজান পাবলিশার্স এনেছে হালিম আজাদের ‘নীল বাংকার’, আগামী এনেছে শাহাবুদ্দীন নাগরীর ‘যেখানে খনন করি সেখানেই মধু’, ধ্রুব এষের ‘ঘুঘুর গল্প’, নান্দনিক এনেছে বিশ্বজিৎ ঘোষের ‘অশেষ রবীন্দ্রনাথ’, প্রশান্ত মৃধার ‘কাছে দূরের গান’, সুজন বড়–য়ার ‘আবৃত্তিযোগ্য কিশোর কবিতা’, আহমাদ মোস্তফা কামালের ‘প্রেম ও অপ্রেমের গল্প’, নালন্দা এনেছে ধ্র“ব এষের ‘টিউনিয়া’, অনন্যা এনেছে মহাদেব সাহার ‘গোলাপের গায়ে কি গন্ধ’, মুনতাসীর মামুনের ‘স্মৃতি-বিস্মৃতির ঢাকা ৩’, কথাপ্রকাশ এনেছে সেলিনা হোসেনের ‘মৃত্যুর নীলপদ্ম’, কলি প্রকাশনী এনেঝে দিপংকর দীপকের ‘নাস্তিকের অপমৃত্যু’ ইত্যাদি।