ঢাকা, ২৬ মার্চ ২০১৩ (বাসস) : রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত গেয়ে ইতিহাস সৃষ্টির মধ্য দিয়ে আজ বুধবার ৪৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ উঠে গেল নতুন এক মর্যাদার উচ্চ শিখরে। বাঙালির দেশপ্রেমের অনন্য এক নজির দেখলো বিশ্ব। ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮১ জন মানুষের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীত গাওয়া অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পোশাক ও পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ প্যারেড মাঠে উপস্থিত হয়ে জাতীয় সংগীতে কণ্ঠ মেলান।
জাতীয় সংগীত গাওয়ার এই অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড ও আশেপাশের এলাকাগুলো জনসমুদ্রে পরিণত হয়। তবে ৩ লাখ লোকের জন্য স্থান নির্দিষ্ট থাকায় অনেককে বাহিরে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখা গেছে।
স্বাধীনতার ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে রাজধানী ঢাকায় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এসব কর্মসূচি থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার দাবির পাশাপাশি সম্মিলিত কণ্ঠে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার।
এ বছর আমাদের মহান স্বাধীনতার ৪৪ বছর পূর্তি হওয়ায় দিবসটি ছিল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়া দিবসটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।
এছাড়াও স্বাধীনতা বিরোধী ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর শুরু হওয়ায় এবারের স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
দিবসটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতি উদযাপন করে। সূর্যোদয়ের মুহূর্তে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সব সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।
দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির মধ্যে ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, শিখা চিরন্তনে পুষ্পাঞ্জলী, ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, দেশজুড়ে মসজিদ, মন্দির ও প্যাগাডোয় দেশের কল্যাণ কামনায় প্রার্থনা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্র, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশু সদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠান সমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়।
সকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
ভোর ৬টায় প্রথমে রাষ্ট্রপতি ও পরে প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে এবং সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড-অব-অনার প্রদান করে।
প্রধানমন্ত্রী পরে মন্ত্রী পরিষদ, উপদেষ্ঠা পরিষদের সদস্য ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, চিফ হুইপ, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক, উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ ও বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দিনটি ছিল সরকারি ছুটির দিন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ বিভিন্ন পতাকায় সজ্জিত করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দেন। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, ও বিভিন্ন বেসরকারি রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে।
এ উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীসহ বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকাটিকিট প্রকাশ করে।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে রক্ষিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে তিনি শ্রদ্ধা জানান। সকাল থেকে দলীয় নেতা-কর্মীসহ অনেক শ্রেণী-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জড় হন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে।
এ সময়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ ও সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী ও এডভোকেট সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।