দেলোয়ার জাহিদ//
একটি ব্যতিক্রমী ব্যতিক্রম দৃষ্টি গোচর হলো বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতে `` গ্রিস-প্রবাসীদের পাশে বাংলাদেশ সরকার, ৫৫ ইউরোতে এমআরপি`` আর ৮৫ ইউরো নয়, এখন থেকে মাত্র ৫৫ ইউরোতে ডিজিটাল পাসপোর্ট হাতে পাবেন গ্রিস প্রবাসী বাংলাদেশীরা। ঢাকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত ২৮ মে বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এথেন্সে দায়িত্বরত রাষ্ট্রদূত গোলাম মোহাম্মদ একজন প্রতিবেদককে এ সুসংবাদটি নিশ্চিত করেছেন। এবিষয়টি নিঃসন্দহে সকল প্রবাসীদেরই দৃষ্টি আকর্ষন করে থাকবে। সিদ্ধান্তটি অবশ্যই আমাদের সকলের সাধুবাদ পাবার দাবি রাখে কিন্তু তা আরো স্বচ্ছ এবং আইনানুগ হতো যদি সকল প্রবাসীদের জন্যই এ সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া হতো।
সাধুবাদ জানাই রাষ্ট্রদূত এবং কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে যারা প্রবাসীদের জন্য এতটুকু করতে পেরেছেন বা করার মতো মানষিকতা পোষন করেন। পাসপোর্ট প্রবাসীদের জন্য বিদেশে আইনী অবস্থানের প্রান। সকল উন্নত, স্বল্প উন্নত, এমনকি উন্নয়নশীল দেশগুলো পর্যন্ত এ সেবাটি প্রদানে অত্যন্ত সংবেদনশীল ভুমিকা নিয়ে থাকে সরকারগুলো।
বাংলাদেশে সরকারের জনপ্রিয়তার একটি উল্লেখযোগ্য মাপকাঠি হলো সরকার প্রবাসীদের কাছে কতটটা জনপ্রিয়!
মাত্র কদিন আগে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মিস নাহিদা রহমানের সাথে প্রবাসীদের মেশিনে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট এবং কমিউনিটির কিছু স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। এর কিছুক্ষণ পরই সন্মানিত হাই কমিশনার কামরুল আহসান ফোন দিলেন। তিনি প্রবাসীদের সমস্যা এবং আগ্রহের কথাগুলো গভীরভাবে জানতে চাইলেন, আমন্ত্রন জানালেন অটোয়ায়। হাতে লেখা সবুজ পাসপোর্টের বিপরীতে কানাডায় হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী ডিজিটাল পাসপোর্টের জন্য স্বশরীরে অটোয়া যেতে পারছেন না, এদের প্রসংগে জরুরী কোন পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেছিলাম। উল্লেখ করেছিলাম ডিজিটাল পাসপোর্ট না হলে এবার অনেকেই হজ্ব করা থেকে বঞ্চিত হবেন।
বিশেষ কোন ব্যবস্থা নিতে সন্মানিত হাই কমিশনার তার সীমাবদ্ধতা ও অসহায়ত্বের কথা খোলাখুলি জানালেন। সে ক্ষেত্রে সরকার যে ইচ্ছে করলে যে কোন নাগরিক সুবিধা প্র্রদানের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে পারেন, এর চাক্ষুস প্রমান পাওয়া গেলো গ্রীসে। যদিও আমাদের আলোচ্য বিষয়টি ফিস কমানো বা বাড়ানো সংক্রান্ত ছিলো না।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্যে আবেদনকারীকে স্বশরীরে অটোয়ায় হাইকমিশন অফিসে উপস্থিত হতে হবে। দূতাবাস থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে অটোয়া যাবার জন্যে, বিদ্যমান পাসপোর্টের ফটোকপি ও সাম্প্রতিক পিপি সাইজের রঙিন ফটোগ্রাফ সংগে নিতে। একটা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য ২ ঘন্টা সময় লাগবে বলে ও দূতাবাস থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। সমস্ত বাংলাদেশের নাগরিক, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে উৎসাহি। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা ( আইসিএও সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৪ পরে ভ্রমণের জন্য বৈধ হবে না সে হিসাবে হাতে লেখা পাসপোর্ট এর জন্য আর আবেদন না করতে ও অনুরোধ করা হয়েছে )।বাংলাদেশ হাই কমিশন যাদের পাসপোর্ট মেয়াদ শেষ বা নবায়ন করা প্রয়োজন, বাংলাদেশী নাগরিক, হাইকমিশনে একটি এমআরপি জন্য আবেদন করতে পারেন এপ্রিল ২০১২ সাল থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) এর প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে. বর্তমান হাতে - লেখা পাসপোর্ট এছাড়াও একটি নতুন এমআরপি দিয়ে তা প্রতিস্থাপিত হতে পারে. জৈব রেকর্ডের জন্য - বৈশিষ্ট্যের মান, অর্থাৎ ফিঙ্গারপ্রিন্ট হিসেবে ডিজিটাল ফটোগ্রাফ এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর , আবেদনকারী ( ছুটির দিন ব্যতীত) সোমবার থেকে শুক্রবার আবেদনপত্রের সাথে হাই কমিশনে শারীরিকভাবে অটোয়ায় উপস্থিত হয়ে আবেদন করতে পারবেন।
মেশিন পাঠযোগ্য পাসপোর্টে এর সকল ডাটা একটি মেশিন দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্ক্যান করার অনুমতি দেয়। ব্যক্তিগত তথ্য পৃষ্ঠার নীচের অংশে অবস্থিত ছাপা অক্ষর, সংখ্যা এবং পি লেখা দুটি লাইন (<<<) যা বাহক এর ছবির নীচের অংশে রয়েছে তা থেকে এসব তথ্য উদ্ধাার করা যায়। বাংলাদেশে পাসপোর্ট মেশিনে পাঠযোগ্য করার প্রক্রিয়া চলে আসছে গত কয় বছর ধরে। এর সেবাখাতে উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়েছে কিনা তা নিবিড় পর্যালোচনার বিষয়। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলতে কেন যেন বারবারই হোচট খাচ্ছে বাংলাদেশ।
পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে গ্রীসে ৫৫ ইউরো বা ৮১ কানাডীয়ান ডলারে আমআরপি পাওয়া যাবে আর প্রদেশ ভেদে অটোয়ায় যাতায়ত, থাকা, খাওয়া নিয়ে জনপ্রতি প্রায় ১০০০ ডলার এবং ফিস ১১৫ ডলার সহ প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশী টাকা খরচ হবে। যা বাংলাদেশ গিয়ে পাসপোর্ট করার খরচের অনেকটা কাছাকাছি।
প্রবাসে বাংলাদেশীদের জন্য নতুন বিড়ম্ভনার নাম এমআরপি- বা মেশিন পাঠযোগ্য পাসপোর্ট । স্বদেশে বাংলাদেশীদের জন্য কিছুদিন আগেও অত্যন্ত ঝামেলাপূর্ণ ছিল পাসপোর্ট তৈরি করার কাজগুলো, আজকাল আর তেমন নেই, অন্ততঃ দেশে পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ করা হয়েছে এবং আবেদনকারী চাইলে এখন খুব সহজে নিজের ঘরে বসেই পাসপোর্ট তৈরি করার প্রাথমিক কাজগুলো করে ফেলতে পারবেন। এতে দুটো উপকার হয়। প্রথমত সময় বাঁচে, দ্বিতীয়ত অহেতুক অনেক দৌড়াদৌড়ির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও দালালদের ওপরে আর নির্ভরশীল হতে হয় না। অনলাইনে পাসপোর্ট তৈরি করার পুরো প্রক্রিয়াটিই পাওয়া যাচ্ছে তা অনুসরণ করে কাজগুলো সম্পন্ন করা যায়।
- দেশে ইলেকট্রনিক মেশিনে দুই হাতের আঙুলের ছাপ দিতে হয়। এরপর নেওয়া হয় ইলেকট্রনিক স্বাক্ষর।
-এ প্রক্রিয়া শেষে কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রটি রেখে দিয়ে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য আবেদনকারীকে আলাদা ডকুমেন্ট দেবেন এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করার তারিখও জানিয়ে দেবেন।
-আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। সংগ্রহ করার সময় নিজে না থাকলেও চলবে।
অনলাইনে পাসপোর্ট চেকিং-নির্ধারিত ডেলিভারি তারিখ ও পাসপোর্ট ডেলিভারি নেয়ার বিষয় তথ্য্ অনলাইনে জানতে পারা যাবে।
অটোয়াস্থ কানাডার বাংলাদেশ হাইকমিশন অন্টারিও সহ কয়েকটি প্রদেশে অনিয়মিত ভাবে কিছু কনস্যুলার সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। নো ভিসা, ভিসা, পাসপোর্ট নবায়ন, এটাস্টেশন (জরুরী) সংক্রান্ত কাজ, ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যয়নপত্র ও এটাস্টেশন (সাধারণ) সেবাদানের দিনে গ্রহণ করা হয় এবং পরবর্তীতে তা ডাকযোগে ফেরত পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে ঠিকানা সম্বলিত ফেরত খাম (এক্সপ্রেস পোস্ট) আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হয়।
নতুন মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্যে স্বশরীরে হাইকমিশন অফিসে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি কানাডার আবেদনকারীদের জন্য সম্পূর্ণ একটি অবাস্তব এবং ব্যয় সাপেক্ষ বিষয়, একেকটি পরিবারে কয়েকজন সদস্যের পাসপোর্ট এমআরপি করতে হলে তাদের প্রত্যেককেই ফিঙ্গার প্রিন্ট ও স্বাক্ষরের জন্য অটোয়ায় যেতে হবে। কানাডায় এ পরিষেবাগুলো ২০ থেকে ৫০ ডলার মধ্যে পাওয়া সম্ভব তা ও বেসরকারী খাত থেকে। আঙুলের ছাপ রুম আর আঙুল মুদ্রণ পরিষেবা. গ্রাহকদের জন্য দ্রুত ফলাফল দেয়া, এজন্য ম্যানুয়াল এবং ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট বিশেষজ্ঞ রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে. শিল্প ব্যাকগ্রাউন্ড চেক নেভিগেশন দ্রুততম ফিরতি প্রদান করে, সেখানে রয়েছে ডাটাবেস, সরাসরি সার্ভার সংযোগ ইত্যাদি. অ-অপরাধমূলক ফিঙ্গারপ্রিন্ট, ব্যাকগ্রাউন্ড চেক নানা কারনে প্রয়োজন হতে পারে, কানাডায়:
• ক্ষমা ও দাবিত্যাগ অ্যাপ্লিকেশন • কর্মসংস্থান • ভিসা ও বর্ডার ক্রসিং • শিশু গ্রহণ • পৃষ্ঠভূমি চেক
• নিরাপত্তা পরিস্কারের • ইমিগ্রেশন
কোন ব্যাপারে তা প্রয়োজন, পেশাগতভাবে, একান্ত অনুরোধে ও যত্ন সহকারে আঙুলের ছাপ দেয়া যায়। প্রয়োজন শুধু ঊদ্যোগের। রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের আন্তরিকতা ও সরকারের নীতি নির্ধারনী সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে হাতে লেখা সবুজ পাসপোর্টের পরিবৃত্তি। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশান ইতিমধ্যে সদস্য দেশসমুহকে জানিয়ে দিয়েছে, ৩১ মার্চ ২০১৫ তারিখের পর থেকে শুধুমাত্র মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ধারী যাত্রী ছাড়া কেউ কোন আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণ করতে পারবেন না। বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেই ইতিমধ্যে ‘এমআরপি’ ইস্যু শুরু হয়েছে কিন্তু এর প্রাপ্তি প্রক্রিয়াকে অহেতুক জটিল করা হয়েছে যা আশু দূর করা প্রয়োজন। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘এমআরপি’ কতটা বাড়তি ব্যয়বহুল এবং তা লাঘবের তেমন কোন দিক নির্দেশনা এ পর্যন্ত নেই। বহু দেশে উদ্বেগ উৎকন্ঠার পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোব্দ হয়ে উঠছেন প্রবাসীরা কারন বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও চলমান অস্থিরতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে প্রবাসীদের।
লেখকঃ সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব সেন্টার অব আলবার্টা, বাংলাদেশ হেরিটেজ এন্ড এথনিক সোসাইটি অব আলবার্টা, সম্পাদক, সমাজকন্ঠ/প্রতিষ্ঠাতা, সভাপতি, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন অব হিউম্যান রাইটস, কুমিল্লা এং কানাডা`র আলবার্টা ও সাস্কাচুয়ান প্রদেশের কমিশনার অব ওথস।